ঢাকাশনিবার , ২৫ মে ২০২৪
আজকের সর্বশেষ সবখবর

ম্যাজিক দেখানোর কথা বলে ছাত্রকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করলেন খন্ডকালীন শিক্ষক

আজকের ডাক - সম্পাদক ও প্রকাশক
মে ২৫, ২০২৪ ১০:০৩ অপরাহ্ণ
Link Copied!

শেয়ার করুন...

ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি:

পাবনার ঈশ্বরদীতে শিশু শিক্ষার্থীকে বেত দিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে রক্তাক্ত করায় শিক্ষকের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দিয়েছেন শিক্ষার্থীর বাবা।

বৃহস্পতিবার (২৩ মে) পৌর শহরের দরিনারিচা রহমান কলোনী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এঘটনায় অভিযুক্ত পৌর শহরের সাউথ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খন্ডকালীন শিক্ষক উত্তম কুমার দাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।

শিক্ষার্থী রাফসান পৌর শহরের শহীদ আমিনপাড়া এলাকার রকিবুল ইসলাম রকিবের ছেলে ও সাউথ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র।
রাফসানের বাবা রকিবুল ইসলাম বলেন, সাউথ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রদীপ কুমার মজুমদার ও খন্ডকালীন শিক্ষক উত্তম কুমার দাস পৌর শহরের রহমান কলোনীর বাড়ি ভাড়া নিয়ে কোচিং সেন্টার খুলেছেন।

বৃহস্পতিবার সকালে ওই কোচিং সেন্টারে প্রাইভেট পড়ার সময় শিক্ষক উত্তম কুমার শিক্ষার্থীদের বলেন, ‘আজ আমার মাথা ঠিক নেই, কথা বললে মার দিবো। এসময় রাফসান বলেন, আপনিতো স্যার সবসময় মারেন। এখনতো আপনার বেত ভাঙ্গা। কি দিয়ে মারবেন। এ কথা শুনার পর শিক্ষক উত্তম কুমার সব শিক্ষার্থীকে বলেন আজ তোদের ‘একটি ম্যাজিক দেখাবো’ এ কথা বলেই ঘরের ভিতর থেকে বেত বের করে এনে রাফসানকে বেধড়ক পেটাতে থাকেন। এক পর্যায়ে রাফসান বেঞ্চ থেকে পড়ে গেলে সেখানেও পেটাতে পিটাতে রক্তাক্ত করেন। একপর্যায়ে রাফসান অজ্ঞান হয়ে পরলে তাকে তুলে বেঞ্চে শুইয়ে দেন। জ্ঞান ফেরার পর রাফসান বাড়িতে এলে তাঁকে ঈশ^রদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করি।

রকিবুল ইসলাম আরো বলেন, সাউথ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রদীপ কুমার মজুমদার অভিভাবকদের বিভিন্ন সময় বলেন, আপনাদের সন্তানদের উত্তম কুমারের কাছে প্রাইভেট পড়তে দিন। সে ভালো পড়াতে পারে। তার কাছে প্রাইভেট পড়লে ফলাফল ভালো করবে। প্রধান শিক্ষকের কথা মতো সেখানে প্রাইভট পড়াতে দিয়েছিলাম। প্রধান শিক্ষক আত্মীয়তার সুবাদে অবৈধভাবে উত্তম কুমারকে খন্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। ঈশ^রদী উপজেলার অন্যকোন সরকারি স্কুলে এ ধরনের খন্ডকালীন শিক্ষক নেই।

রাফসানের মা ফরিদা পারভীন বলেন, রাফসানের জামা খুলে দেখি, বেতের প্রহারে পিঠ রক্তাক্ত হয়ে গেছে। তাকে তাৎক্ষনিক ঈশ^রদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাই। প্রধান শিক্ষক প্রদীপ কুমার আর উত্তম কুমার একসঙ্গে কোচিং খুলেছেন। এর আগেই প্রধান শিক্ষককে আমি বলেছিলাম স্যার আমার ছেলেটি একটু অসুস্থ ও মেধা শক্তি কম। তার দিকে খেয়াল রাখবেন। স্যার বলেছিলেন, মেধা নেই পড়ানোর দরকার কি। অন্যকাজে লাগিয়ে দিতে হবে।

ঈশ্বরদী সাউথ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রদীপ কুমারের মোবাইল যোগাযোগ করে তাঁকে পাওয়া যায়নি। খন্ডকালীন শিক্ষক উত্তম কুমারের মোবাইলও বন্ধ রয়েছে। এ কারণে তাদের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

ঈশ্বরদী উপজেলার ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা অফিসার জহুরুল ইসলাম জানান, আমি একদিন সাউথ স্কুল পরিদর্শনে গিয়ে ৫ম শ্রেণির ক্লাসে ওই শিক্ষককে পাই। তাকে জিজ্ঞাসা করি, আপনি কে? স্কুলে কি? তখন সে বলে যে শখ করে ক্লাশ নিচ্ছে। আমি তাকে তাৎক্ষণিকভাবে ক্লাশ থেকে বের করে দিই এবং আর কখনও ক্লাশ নিতে নিষেধ করি। প্রধান শিক্ষক প্রদীপ কুমার মজুমদারকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন যে, সে অনুমতি না নিয়েই ক্লাশে ঢুকেছে আর সে ফ্রিতে ক্লাশ নেয়, সময় কাটায়। আমি প্রধান শিক্ষককে বলে দিই, সে যেন কখনও ক্লাশে না ঢোকে।

তিনি জানান, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কোনো খন্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগের বিধান নাই। এছাড়া এ স্কুলে শিক্ষকের কোনো শূন্যপদ নেই। সুতরাং খন্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগের কোনো প্রয়োজনও নেই।

ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম বলেন, আহত শিশুর বাবা থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। ঘটনা তদন্ত করে সত্যতা পেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


শেয়ার করুন...

বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।
error: Content is protected !!