ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি:
শীতে গ্রামবাংলার অন্যতম প্রিয় খাবার পিঠা। ঘরে ঘরে বেড়ে যায় পিঠার কদর। আর এ মৌসুমকে কেন্দ্র করে পিঠা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন মৌসুমি পিঠা বিক্রেতাগণ ও পিঠা তৈরির কারিগরেরা।
এখন শুধু বাড়িতেই সীমাবদ্ধ নেই, শীত এলে বিভিন্ন পাড়া বা মহল্লার অলিগলিতে দেখা যায় হরেক রকমের পিঠার দোকান। সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে চিতই পিঠার দোকান। মূলত কাঠ বা টিন দিয়ে এসব দোকান তৈরি করে থাকেন পিঠা বিক্রেতারা। আর সেই পিঠার স্বাদ নিতে দোকানে ভিড় জমান সব শ্রেণি পেশার পিঠাপ্রেমীরা। এখন দোকানগুলোতে বেচাকেনাও বেড়েছে প্রচুর। কারও পছন্দ তুলতুলে নরম চিতই পিঠা, আবার কারও পছন্দ কড়া ভাজা পিঠা, আবার কারো বা ভাঁপা পিঠা। আবার পিঠার সাথে রয়েছে হরেক রকম ভত্তা। এর মধ্যে ডিম-চিতই ও দুধ-চিতই পিঠাও রয়েছে পছন্দের তালিকায়।
ঈশ্বরদীর বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে দেখা গেছে পিঠা বিক্রয়ের ধুম। উপজেলার ঈশ্বরদী শহর, বাস স্ট্যান্ড, পুরাতান বাস ট্যান্ড, উপজেলা গেট, রেলওয়ে জংশন, হাসপাতালরোড, পোষ্ট অফিস মোড়, আলহাজ্ব মোড়, রুপপুর, জয়নগর, গ্রীনসিটি এলাকা, দাশুড়িয়া, মুলাডুলি, ঢুলটি, বোর্ডঘর মোড়, আলওতাপাড়াসহ প্রায় এলাকাতেই চলছে শীতকালীন পিঠা বিক্রেতাদের পিঠা তৈরি ও বিক্রয়। এক এক ব্যবসায়ীর পিঠা তৈরির কৌশল একেক রকম। তেমনি পরিবেষনেও রয়েছে ভিন্নতা।
ঈশ্বরদী পৌর মার্কেটের রোকেয়া খাতুন নামে একজন পিঠা ব্যবসায়ী জানান, শীত এলেই তিনি চিতই পিঠা ও ভাপা পিঠা বিক্রয় করেন। সাংসারিক বিভিন্ন কাজের পাশাপাশি পরিবারের একটু বাড়তি আয়ের জোগান দিতে তিনি এ পেশা ধরে রেখেছেন দীর্ঘদিন। অল্প খরচে ভালো লাভের আশায় প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত তিনি এ ব্যবসা করছেন। এতে তাঁর বেশ ভালো আয় হচ্ছে বলে জানান।
ঈশ্বরদী রেলগেট, ঈশ্বরদী বাজার, ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনের পাশে বসা কয়েকজনর পিঠা ব্যবসায়ী জানান, আমরা নিয়মিত এখানে বিভিন্ন ধরনের পিঠা তৈরি করে বিক্রি করে থাকি। সন্ধা থেকে রাত ১১ টা পর্যন্ত চলে আমাদের ব্যবসা। কাস্টমারও আসে অনেক। বেঁচা বিক্রিও হয় বেশি।
ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর, আলম ও নুরু মিয়া বলেন, ছোট থেকেই আমাদের পিঠা খুব পছন্দ। ডিম-চিতই পিঠা আমাদের খুব পছন্দ। প্রতিদিন সন্ধ্যা হলে আমরা দোকানে ছুটে যাই একটু পিঠার স্বাদ নিতে।
মুলাডুলি বাজার এলাকার পিঠা ব্যবসায়ী রানী বেগম জানান, শীত বেশি পড়লে পিঠা বিক্রি বেশি হয়। প্রতিদিন গড়ে পাঁচ থেকে ছয় কেজি চালের পিঠা বিক্রি করেন তিনি। চালের গুঁড়া, নারকেল, গুড়, লাকড়ি ও অন্যান্য খরচ বাদে ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা লাভ হয় দিনে। শুক্রবার সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়। মূলত সকাল ও সন্ধ্যায় পিঠা বিক্রি হলেও তুলনামূলক সন্ধ্যায় দোকানে পিঠার চাহিদা বেশি থাকে। অনেক সময় সন্ধ্যা হলে পিঠা কিনতে দোকানে সিরিয়াল দেন ক্রেতারা।
তিনি বলেন, অনেকে বাড়িতে নিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে খান। এ ছাড়া বেশি পিঠা প্রয়োজন হলে এক দিন আগে অর্ডার দিয়ে যান।
শুধু শীতের পিঠাই নয়। ঈশ্বরদীর বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি হচ্ছে কালাই রুটি, পাকান পিঠা, পাটিশাপটা। একবার হলেও মানুষ কালাই রুটির স্বাদ নিতে ভুলছেন না।