জুবায়ের খান প্রিন্স, পাবনা:
পাবনার ঈশ্বরদী ও পার্শ্ববর্তী উপজেলা লালপুর এবং বনপাড়ায় বারবার মোবাইল কোর্টে জব্দ হচ্ছে ভ্যাজাল পাটারি ও গুড় তৈরির কারখানা। জেল জরিমানা দিয়েও থামছেনা অসাধু ব্যবসায়ীরা।
সারাদেশে জেকে বসেছে শীতের আমেজ, ভোরের কুয়াশা আর শীতল বাতাসে উত্তরাঞ্চলে জমে উঠেছে পিঠা খাওয়ার ধুম। কিন্তু প্রতিবারের মত পুরোপুরি শীত পরার আগেই খেঁজুর গাছে রস আসার আগেই বাজারে সয়লাব হয় সস্তা পাটারি ও গুড়। অসচেতন ভোজনরসিক ক্রেতারাও আগাম ও সস্তায় পাটারি পেয়ে মহাখুশি হয়ে থাকে। সঠিকভাবে যাচাই করার প্রয়োজনও মনে করছেনা ক্রেতারা। বিভিন্ন অভিযোগের পর ইউএনও বা ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে বারবার জব্দ করা হচ্ছে গুড় তৈরির বিভিন্ন অবৈধ কারখানা। তাদেরকে জেরার করার পর জানা যায় ইন্ডিয়া থেকে বিভিন্ন রকম বিষাক্ত ভ্যাজাল গুড় মাত্র আশি টাকা কেজি কিনে এনে সাথে যে কোন ধরনের রস মিশিয়ে কেমিকেল দিয়ে পাটারি বানিয়ে দেড়শো থেকে দুইশত টাকা কেজি পাইকারি বিক্রয় করছে। অল্প দামে চকচকা মিষ্টি আগাম পাটারি পেয়ে অনেকেই সেগুলো খেয়ে ক্যান্সার সহ নানারকম অসুখে ভুগছে।
কিছু চালাক ব্যবসায়ী খেঁজুর বাগানেই অস্থায়ী ছাউনি ও চুলা বসিয়ে রাতের বেলাতেই গাছ থেকে রস পেরে পুরোনো পচা লালী গুড়, চিনি, হাইড্রোজ, চুন, সোডা, সরিষা তেল সহ নানারকম কেমিকেল মিশিয়ে আকর্ষনীয় পাটারি বানিয়ে বিক্রয় করছে দুইশ থেকে তিনশ টাকা কেজি। এই পাটারি খেয়েও শিশু, বৃদ্ধ, অসুস্থ রোগীরা আরও ভয়াবহ অসুখে ভুগছে এবং খাটি খেঁজুর রসের স্বাদ থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ ক্রেতারা। খেঁজুর গাছের নিচ্ছেনা নিরাপদ ব্যবস্থা। বাদুর, পাখি, সাপ ও পোঁকামাকড়ের উপদ্রব থেকেই যাচ্ছে। কোন বাঁশের চাটাই বা নেটের ব্যবস্থা নাই, রস ঠিকমত ছাকা বা বাছাই হচ্ছে না।
এদিকে সকাল সাতটার আগেই বাগানে বানানো পাটারি হাট-বাজারে নিয়ে বিক্রি করে দেয়ায় মোবাইল কোর্টও তেমন কোন ব্যবস্থা নিতে পারছেনা।
পাবনার ঈশ্বরদী আরামবাড়িয়া, নাটোর লালপুর উপজেলা ও বনপাড়া এলাকায় পেশাদারি খেঁজুরের পাটারি ও গুড় বেশি বানানো হয়।
তবে কতৃপক্ষ, সচেতন মহল ও স্বেচ্ছাসেবকদের উদ্যোগে সবাইকে বোঝানোর ফলে কিছু সচেতন উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে যারা সম্পুর্ন নিজস্ব তত্বাবধানে সব রকম নিয়ম মেনে ভ্যাজালমুক্ত পাটারি বানিয়ে স্থান ও মান ভেদে ছয়শত থেকে হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রয় করছে এবং এই মানসম্পন্ন পাটারি গুড় শীত শুরু হবার দুই মাস পর বিক্রয় শুরু করে এবং শীত শেষ হবার এক মাস আগেই বিক্রয় বন্ধ করে এবং দামটাও বেশি হওয়ায় অসাধু ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন কৌশল ও প্রলোভন দিয়ে বিষাক্ত ভ্যাজাল পাটারি গুড় সয়লাব করছে বাজারে।
লালপুর বাজারে গিয়ে দেখা যায় যেখানে পাটারি বিক্রয় করছে সেখানেই টন টন চিনির বস্তা সাজানো থাকছে। খেঁজুর রসের চাষী বা ব্যবসায়ীরা পাটারি বিক্রয় করেই বস্তা বস্তা চিনি প্রকাশ্যে কিনে বাড়ি ফিরছে।
স্থানীয় এবং সচেতন মহলের দাবি মোবাইল কোর্ট আরও জোড়দার করে রাত থেকে ভোর পর্যন্ত টহল চালানো এবং বাজারে মনিটরিং ব্যবস্থা করার পাশাপাশি সাধারণ ভোক্তাদের বেশি বেশি সচেতন করলে গ্রামের ঐতিহ্যবাহী খেঁজুর রসের পাটারি গুড় সবার হাতে তুলে দেয়া সম্ভব।