ঢাকাবৃহস্পতিবার , ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
আজকের সর্বশেষ সবখবর

দূষণ আর দখলে অস্তিত্ব সংকটে পাবনার আত্রাই নদী

আজকের ডাক - সম্পাদক ও প্রকাশক
ডিসেম্বর ১৯, ২০২৪ ৪:৩৪ অপরাহ্ণ
Link Copied!

শেয়ার করুন...

জুবায়ের খান প্রিন্স, পাবনাঃ

দখল দূষণে মানচিত্র থেকে মুছে যাচ্ছে আত্রাই নদী। স্থানীয় প্রভাবশালী ও ভূমি অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে নদী সিকস্তি ও নদী পয়স্তি জমির জাল কাগজমূলে আত্রাই ভরাট করে নির্মাণ করা হয়েছে অসংখ্য ভবন ও আধাপাকা দোকান। প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই নদীর তলদেশ ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ করায় ঐতিহ্যবাহী আত্রাই নদীর আয়তন নি:শেষ হওয়ার পথে। এককালের স্রোতস্বিনী নদীটি এখন মরাখাল।

পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার নন্দনপুর ইউনিয়নে ইছামতির স্রোত থেকে উৎপত্তি হওয়া আত্রাই নদীটি সাঁথিয়া, বেড়া ও সুজানগর উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মাসুমদিয়া ইউনিয়নের বাদাই নদীর সাথে মিলিত হয়ে যমুনায় মিশেছে। তবে সাঁথিয়ার ওপর দিয়ে প্রবাহিত আত্রাই নদীর বেশির ভাগ অংশই দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের স্থাপনা। পাবনা-ঢাকা ও কাজিরহাট- বগুড়া মহাসড়কের পাশে অবস্থিত জেলার অন্যতম বানিজ্যিক এলাকা কাশিনাথপুরের স্থানীয় প্রভাবশালীরা আত্রাই নদীর জায়গা দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করে ভাড়া নিচ্ছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ তুলেছেন।


অনুসন্ধানে দেখা গেছে, কাশিনাথপুর ট্রাফিক মোড় থেকে কাশিনাথপুর হাটের শেষ সীমানা পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার নদী দখল হওয়ায় নদীর কোনো অস্তিত্বই আর নেই। কাশিনাথপুর হাটের একাংশে নদীর মাঝখানে নির্মিত সেতুর দুই দিকে নদীর দুই পাশের পাকা সড়কের দু’পাশ ভরাট করে বহুতল ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মার্কেট, আবাসিক ভবন ও ৪০-৪৫টি দোকান নির্মাণ করা হয়েছে, এখনো নির্মাণ চলছে। অন্যদিকে নদীর বন্ধ জলাশয়টি হাটবাজার ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ময়লা আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে।

 

স্থানীয়’রা জানান, আত্রাই দখলের শুরু হয় ২০০০ সালের পর থেকে। ওই সময় সুজানগর উপজেলার আহাম্মদপুর ইউনিয়নে সরকারি অর্থে আত্রাই নদীর ওপর সেতু ও সড়ক নির্মাণ করা হয়। নির্মাণ শেষ হওয়ার পরপরই রাস্তার দুই পাশ দখলের প্রতিযোগিতা লেগে যায়। নদীর দুই পাড়ে গড়ে তোলা এসব স্থাপনার মালিক হচ্ছেন স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ।

এলাকাবাসী আরো জানান, ৯০র দশকেও প্রবাহমান আত্রাই নদীর বুকে পাল তোলা পণ্যবোঝাই সারি সারি নৌকা যাতায়াত করত। বাঘুলপুর, বাদাই, ভাটিকয়া, সাগতা, রানীনগর, মাসুমদিয়া, আমিনপুরসহ বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের যাতায়াতের মাধ্যম ছিল আত্রাই নদী। কিন্তু সে সবই এখন অতীত। এ বিষয়ে বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলা প্রশাসনের কোনো নজরদারি নেই বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।

এলাকাবাসীর দাবি,একসময় নদীটি চওড়া ও খরস্রোতা ছিল। কিন্তু এখন অনেক জায়গায় নদীর চিহ্ন পর্যন্ত নেই। একসময়ের স্রোতস্বিনী আত্রাই নদী এখন বন্ধ জলাশয়ে পরিণত হয়েছে। আত্রাই নদী রক্ষায় কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তারা।

 

বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হুমায়ুন কবির জানান,
একসময় এই নদীতে নৌকা ও লঞ্চ চলতো। অবাধে বিচরণ করতো বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। জলাধারা সংরক্ষণ আইন থাকলেও প্রশাসনের নজরদারির অভাব ও আইন প্রয়োগ না করায় প্রভাবশালীরা নদীর বুকে নির্মাণ করেছে অসংখা বহুতল আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন। আবার কোথাও কোথাও নদী দখল করে ফসলের আবাদ করা হচ্ছে।

 

তবে নদী দখলের কথা অস্বীকার করেন কতিপয় ভবন নির্মান কারী। তারা বলেন, আমরা কেনা জমির উপর ভবন নির্মাণ করেছি, জমির সকল প্রকার বৈধ কাগজপত্রাদি রয়েছে।

সাঁথিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাদিয়া সুলতানা বলেন, তথ্য -উপাত্ত ও কাগজপত্রাদি যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে নদীর জমি উদ্ধারে প্রযোজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


শেয়ার করুন...

বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।
error: Content is protected !!