আন্তর্জাতিক চিঠি দিবস আজ। একসময় যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ছিল চিঠি। কালের বিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে চিঠি লেখার মাধ্যমেরও পরিবর্তন হয়েছে।
বহু আগে ইংরেজ কথাকার সমারসেট মম যা বলেছিলেন, বর্তমানের বাস্তবতায় সেটাই সত্যি। চিঠি লেখা আসলেই এক হারিয়ে যাওয়া শিল্প।
ভালো আছি ভালো থেকো আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো, এই গানের বোল বাঁধতে গিয়ে কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ কি কোনো দিন ভেবেছিলেন যে মানুষ একসময় শুধুই আকাশের ঠিকানায় অর্থাৎ অন্তর্জালে (ই-মেইলে) চিঠি লিখবে:
শেষ কবে চিঠি লিখেছেন বা পেয়েছেন? এ প্রশ্নের উত্তর হয়তো অনেকেই দিতে পারবে না। প্রযুক্তির কল্যাণেই চিঠি লেখার শিল্প প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে। ঘোড়ার ডাক প্রচলনের আগে কীভাবে চিঠি আদান-প্রদান হতো, তা নিয়ে দ্বিমত থাকলেও আজকাল দাপ্তরিক কাজের নথি বা আবেদনপত্র ছাড়া কেউ ডাকঘরে যে যায় না, সেটা সবারই জানা।
অথচ অনেক দশক আগেও দূরে থাকা আপনজনের সঙ্গে যোগাযোগের একটি মাধ্যমই ছিল চিঠি। শুধু দূরে নয়, খুব কাছের মানুষকেও মুখে বলতে না পারা কথাগুলোও সযত্নে সাজিয়ে জানাতেন চিঠিতে। এক একটি চিঠিতে নানান গল্প ও ইতিহাস বহন করত।
তবে বর্তমানে ই-মেইলে আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের খুদে বার্তার ভিড়ে কাগজের চিঠি হারিয়ে গেছে। ছোট ছোট বাক্যে, কাটছাঁটকৃত শব্দে বিন্যস্ত এই যোগাযোগ ব্যবস্থাকে ভাষাবিজ্ঞানীরা নাম দিয়েছেন ‘টেক্সটস্পিক’। কারও সঙ্গে কথা বলা প্রয়োজন হলেই, চট করে বাংলা-ইংরেজি মিশিয়ে ইনবক্সে পাঠানো যায়। আবেগ এখন আর শব্দে প্রকাশ পায় না। আবেগ বোঝাতে মেসেঞ্জার বা হোয়াটস্যাপে ইমোজি পাঠানো হয়। তবে রোববার (১ সেপ্টেম্বর) না হয় চিঠি দিবসকে কেন্দ্র করে কাগজ-কলমে আপনজনকে মনের কথাগুলো চিঠির মাধ্যমে জানিয়ে দিতে পারেন।
প্রতিবছর আজকের এই দিনে পালিত হয়ে আসছে ‘আন্তর্জাতিক চিঠি দিবস’। এই দিবসের শুরু ২০১৪ সালে অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক রিচার্ড সিম্পকিনের হাত ধরে। নব্বই দশকের শেষের দিকে তিনি দেশের বড় ব্যক্তিত্বদের চিঠি পাঠাতেন। তবে বেশিরভাগ সময় তিনি সেসব চিঠির উত্তর পেতেন না। আর যখন কোনো চিঠির উত্তর পেতেন, তখন তার আনন্দের সীমা থাকত না। সেই ভালোবাসা থেকে সিম্পকিন ২০১৪ সালে এই দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেন। কারণ, তিনি চেয়েছিলেন চিঠি লেখার চর্চা আবার ফিরে আসুক।